Thursday, 22 December 2016

কচ্ছপের কামড়ে

কচ্ছপের কামড়ে




ভাগ্যিসি সেদিন আকাশে গুড়গুড় করে মেঘ ডেকে উঠেছিল, না হলে কি আর সেই বিদঘুটে নাড়োড়বান্দা জীবটা ছাড়ত আমাকে?
গরমে আইচাই করতে করতে নদীর জলে নেমেছি - মুখ ডুবিয়ে চুকচুক করে সবে জল খেতে শুরু করেছি - এমন সময় বলা নেই কওয়া নেই, কে যেন আমার ল্যাডটা আচ্ছা করে কামড়ে ধরেছে৷
ঘাড় ফিরিয়ে দেখি কি-
ওরে বাবা- প্রকান্ড একটা কচ্ছপ যে৷
"ছাড় বাবা, ছেড়ে দে বাবা' বলে যতই খোশামোদ করি কচ্ছপটা ততই আমাকে পেয়ে বসে৷ কথায় বলে কচ্ফপের কামড় ছাড়তে কি আর চায়?
কচ্ছপটা আবার অসম্ভব ভারী৷ কোনো গতিকে সেটাকে টানতে টানতে আর চেঁচাচে চেঁচাচে বাসার দিকে পা চালাই- ওরে বাঘু রে, ওরে হাতু রে, কে কোথায় আছিস রে, শিগগিরি আয় রে-৷
 এই করে তো অতি কষ্টে বাসার কাছ বরাবর গেছি< আর বাঘুরাও হই-হই রই-রই করে এসে পড়েছে৷
আমরা ল্যাজে মস্ত একটা কচ্ছপকে ঝুলতে দেখে ওরা ধেই-ধেই করে নাচ জুড়ে দিয়েছে-
"ওরে কী মজা রে'
"শ্যালপঞ্জিত ল্যাজে করে কচ্ছপ ধরে এনেছে রে৷
"আজ আমাদের জোর ফিস্টি হবে রে৷'
ওদের নাচ আর থামে না৷
এদিকে কচ্ছপটাও আমার ল্যাজ ছাড়ে না৷
যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে বলি, "বাবা রে, আমার ল্যাজ গেল- শিগগির ছাড়া আগে৷' কিন্তু ছাড়াবেই বা কী করে?
টানাটানি করে ছাড়াতে গেলে যদি ল্যাজটাই কেটে নেয়?
বাঘুদের নাচ থেমেছে৷ ওরাও তখন ভাবছে কী করা যায় - কী করে ল্যাজ ছাড়ানো যায়৷
এমন সময় আকাশে গুড়গুড় গুড়গুড় করে মেঘ ডাকে৷ মেঘ ডাকতেই কচ্ছপটা আমার ল্যাজ ছেড়ে দিয়ে ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায়৷
বাঘরা আনন্দে হাততালি দেয়৷
আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচি৷
হুড়ুম-দড়ুম গুড়ুম-গুড়ুম করে মেঘেরা তখন গোটা আকাশ ছেয়ে ফেলেছে৷ দেখতে দেখতে চড়বড় চড়বড় করে বৃষ্টিও নেমেছে৷
বাঘরা নেচে নেচে ছড়া বলছে-
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে
রা্শন দেব মেপে৷
মাথায় দিয়ে টোকা৷
লাইন দেবে খোকা৷৷
তারপ ক'দিন ধরে কেবল বৃষ্টি আর বৃষ্টি৷
এই বৃষ্টি তো এই বৃষ্টি৷
টিপটিপ ঝিরঝির ঝরঝর ঝমঝম-হরদম কানে আসছে বৃষ্টির ধারাপাত - সারাদিন সারারাত৷
আমার আবার সর্দির ধাত৷ ভিজে ভিজে খালি গোবার হচ্ছি আর হ্যাঁচ্ছো হ্যাঁচ্ছে করে হ্যঁচে মরছি৷
ছাতা না কী যেন বলে, তাই মাথায় দিয়ে মানুষগুলো কিন্তু দিবি্্য আছে৷ ব্যাঙেদেরও ছাতা হয়, সে ছাতা তো এই বনে জঙ্গলে বিস্তার৷
আহা, এই বর্ষার কেউ যদি একটা ছাতা দিয়ে আমার মাথাটা অন্তত বাঁচত৷
কথাটা বাঘমামার কানে তুলেছি৷ বাঘমামার বড়ো দয়ার শরীর৷ কলকাতার মাসিকে চিঠি লিখে একটা ছাতা আনিয়ে দিয়েছে৷
বাঘু সেই ছাতাটাকে আমার ঘাড়ে বেশ করে বেঁধে ঢেঁধে ফিট করে দিয়েছে৷
টিপটিপ পড়ছে ছাতার কাপড়ে৷ গায়ে এক ফোঁটা লাগছে না আর৷ ঠিক যেন হচ্ছে একটা হয়ে যাচ্ছে৷



বাঘুর কথায় কান না দিয়ে আমি গুটি গুটি অনেক দুর হেঁটে এসেছি৷ মুশকিল হয়েছে কী, ছাতায় ঢাকা পড়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না৷ আন্দাজে চলেছি৷
হঠাত কে যেন পাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠেছে _ ওরে দ্যাখ, দ্যাখ, ইয়া বড়ো একটা কচ্ছপ নদী থেকে উঠে এসেছে৷
তারপর আর কী, দমাদ্দম লাঠি-সোঁটা পড়তে থাকে ছাতার ওপর৷
ছাতার ভেতর থেকে আমি যতই "বাপ রে মা রে ' করে চেঁচাচ্ছি - ওরা ততই ধর ধর মার মার করে পিটে যাচ্ছে৷ হট্টগোলে আমার কথা ওরা বোধহয় শুনতেই পাচ্ছে না৷
ছাতার শিকগুলো বেঁধে তেবড়ে-তুবড়ে গেছে, ছাতার কালো কাপড়টাও শেষ পর্যন্ত ছিঁড়ে খুঁড়ে ফর্দাফাঁই৷
সশরীরে মাথটা নিয়ে আমি তখন বেরিয়ে পড়েছি৷ আমাকে দেদেই ওরা যেন ভূত দেখার মতন অাঁতকে উঠেছে - ওরে৷ পন্ডিতমশাই যে রে৷ পালা - পালা - পালা৷



0 comments:

Post a Comment